‘নাগর জুটিয়েছো? নাগর তো মধু খেয়ে চলে যাবে’

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকের নামে যৌন নিপীড়ন এর অভিযোগের ঘটনা প্রতিনিয়ত মোড় নিচ্ছে নতুন নতুন দিকে। নাট্যকলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ইসমত আরা ভূঁইয়া ইলাসহ একাধিক শিক্ষিকার সাথে একই বিভাগের শিক্ষক রুহুল আমিনের যৌন নিপীড়নের ঘটনা প্রকাশ পায় গত ১৭ জুলাই রেজিস্ট্রার বরাবর তিন শিক্ষিকার লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অভিযুক্ত শিক্ষক রুহুল আমিনকে সাময়িক ভাবে বহিষ্কার করে। এরই জের ধরে গত ১৮ জুলাই রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে অভিযুক্ত শিক্ষক আরেকটি আবেদন করেন, যেখানে তিনি উপাচার্যের কাছে আইনি সহায়তা ও ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

আবেদনে রুহুল আমিন বলেন, অভিযোগকারী শিক্ষিকারা এরপূর্বে আমাকে দেখে নিবে- এমন কথা বলেছেন।

তিন শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ করে তিনি লিখেন যে, তারা (শিক্ষার্থী) বিভিন্ন সময় আমাকে সতর্ক করেছে। এই প্রসঙ্গে ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শবনম মুস্তারী স্বর্ণা অভিযুক্ত শিক্ষককে ফোন দিয়ে ছুটিতে যাবার কথা বলেছেন বলে দাবি করেন তিনি (অভিযুক্ত শিক্ষক)।

কিন্তু এই আবেদনের চিঠি সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলে আসলে তা মিথ্যা বলে দাবি করে আরেকটি আবেদন করেন ওই নারী শিক্ষার্থী।

এই ঘটনার পর পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হতে দেখা যাচ্ছে। আবদেনপত্রে নাম থাকা অপর দুই শিক্ষার্থী কায়সার হোসেন ও হাসান মাহামুদ সৃজনও এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি। তবে আংশিক মত প্রকাশ করেছেন দুজনই।

কায়সার হোসেন তার বক্তব্যে জানান, শিক্ষক রুহুল আমিনের আবেদনে উল্লেখিত কথা তারা বলেছেন। তবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সৃজন। তিনি বলেন, ‘আমাকে বিভাগ থেকে নাচ করার জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো। এখন বললে পারবেন আমার রেজাল্ট ঠিক রাখতে? পারলে বলুন বলছি।’ তার বক্তব্যে অনেকটা স্বীকারোক্তিমূলক ভাব প্রকাশ পায়।

ঘটনা এখানেই শেষ নয়। আবেদনে উল্লেখিত শিক্ষার্থী শবনম মুস্তারী স্বর্ণাকে নিয়ে যে বক্তব্য প্রকাশ করা হয়েছে তার মূলে অন্য ঘটনা রয়েছে বলে দাবি করেন সেই শিক্ষার্থী। স্বর্ণা পূর্ব-পশ্চিমকে বলেন, ‘একদিন স্যার আমাকে বলেছিলেন, শিক্ষার্থীরা আমার ক্লাস করে না। আমি ছুটিতে চলে যাবো। সেই সময়টা আমি বলি, স্যার ছুটিতে চলে যান। পরে একরাতে স্যার আমায় ফোন দিয়ে আবার বলেন, সেই প্রেক্ষিতে আমি বলেছি, স্যার ছুটিতে চলে যান। আমি তখন ক্লাস রিপ্রেজেন্টিভ (সিআর) ছিলাম। এর বেশী কিছু নয়।’

এই অভিযোগের পর বিশেষ অনুসন্ধান চালায় পূর্বপশ্চিমবিডি.নিউজ। যেখানে স্বর্ণা একটি ঘটনা প্রকাশ করেন, যা ছিলো এমন:

‘স্যার আমাকে ক্লাসে সকলের সামনে বলেন, তোমাকে দেখতে কাজের মেয়ের মতো লাগে, কিন্তু শাড়ি পড়লে সুন্দর লাগে। আরো বলেন, নাগর জুটিয়েছো না? নাগর কিন্তু মধু খেয়ে চলে যাবে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, ‘স্যার এক মেয়েকে বলেছেন, তোমার ফিগার তো কোকাকোলার বোতলের মতো। এমনকি বিভাগের এক শিক্ষার্থীর মেয়ে বন্ধুকে বলেছেন, আপনার সাথে ওর (ছেলে বন্ধু) যায় না, আমার সাথে আপনাকে যায়।’

‘তারই বিভাগের কোন এক শিক্ষার্থীর স্ত্রীকেও নাকি বলেছেন, আমি তোমার প্রেমে পড়ে গেছি।’

মধ্যরাতে স্যার কোন কারণ ছাড়াই ফোন দেন যা মেয়ে হিসেবে অসুবিধা মনে হয়- এমন কথাও স্বীকার করেছে নাট্যকলা বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থী।

এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে ঘটনা মোড় বারবার বাঁক নিচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী মনে করেন, ঘটনার মোড় ঘোরানোর জন্য একটি চক্র কাজ করছে।

এই প্রসঙ্গের অভিযুক্ত শিক্ষক রুহুল আমিনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হলে বহিষ্কার স্থায়ী হবে। না হলে আবার ক্লাসে যাবে। সে তো আমার শত্রু নয় । সকল শিক্ষক আমার ভাই, সহকর্মী।’

উল্লেখ্য এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রক্টর প্রফেসর ড. মোঃ জাহিদুল কবীরকে অব্যাহতি প্রদান নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে । যেখানে তার অব্যাহতিতে অনেককেই মর্মাহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।